আমাদের
মাতৃভূমির নাম বাংলাদেশ। এর
আয়তন ১,৪৭,৫৭০
বর্গকিলোমিটার এবং লোকসংখ্যা প্রায়
১৬ কোটি। অসংখ্য নদী-নালা আর প্রাকৃতিক
সৌন্দর্যে ভরপুর এই দেশ।
এই দেশটি ১৯০ বছর
ইংরেজদের অধীনে এবং ২৩
বছর পাকিস্তানের পদানত ছিল। ১৯৪৭
সালের ভারত স্বাধীনতা আইনের
মাধ্যমে ভারত ও পাকিস্তান
দুটি রাষ্ট্রের সৃষ্টি। ১৪ আগষ্ট ইংরেজরা
ক্ষমতা হস্তান্তর করে এদেশ থেকে
চলে যায়। এ সময়ে
বাংলাদেশ পাকিস্তানের একটি প্রদেশে পরিণত
হয়। যার নাম হয়
পূর্ববঙ্গ। তখন থেকেই পাকিস্তানীরা
বাঙ্গালীদের উপর অত্যাচার, নির্যাতন
ও বৈষম্য শুরু করে।
এরই অংশ হিসেবে তারা
আঘাত করে বাঙ্গালীদের মাতৃভাষার
উপর। সমগ্র পাকিস্তানের শতকরা
৫৬ভাগ মানুষের মাতৃভাষা বাঙলাকে উপেক্ষা করে উর্দূকে পাকিস্তানের
রাষ্ট্রভাষা ঘোষণার চক্রান্ত করতে
থাকে। বাঙ্গালীরা তা মেনে নিতে
রাজী হয়নি। সমগ্র পূর্ববঙ্গে
আন্দোলনের ঢেউ লাগে। ১৯৫২
সালে মাতৃভাষা বাংলার দাবীতে ছাত্র,
শ্রমিকসহ সকল শ্রেণীর লোক
রাস্তায় নেমে আসে। আন্দোলনের
মুখে পাকিস্তানীরা দাবী মেনে নিতে
বাধ্য হয়। ১৯৫৬ সালের
সংবিধানে বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসাবে
গ্রহণ করে। ১৯৫৮ সালের
সামরিক শাসন, ১৯৬২ সালের
শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ৬
দফা আন্দোলন, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যূত্থান
পেরিয়ে সামরিক শাসনের অধীনে
১৯৭০ সালে সাধারণ নির্বাচন
হয়, সেই নির্বাচনে বঙ্গনন্ধু
শেখ মুজিবর রহমানের নেতৃত্বে
আওয়ামীলীগ সমগ্র পাকিস্তানের ৩১৩টি
আসনের মধ্যে ১৬৭টি আসন
লাভ করে। অর্থাৎসংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে।
কিন্তু জেনারেল ইয়াহিয়া খানের সামরিক জান্তা
ক্ষমতা ছাড়লো না। বরং
১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ
রাতে পাকিস্তানের হানাদার বাহিনী বাংলাদেশে গণহত্যা
শুরু করলো। যে নৃশংস
হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল তার একমাত্র উদ্দেশ্য
ছিল স্বাধীনতাকামী জনগনের স্বাধীনতার স্বপ্নকে
ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয়া। গণহত্যার
প্রাক্কালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু
শেখ মুজিবর রহমানকে গ্রেফতার
করেন। তাঁকে গ্রেফতার করার
পূর্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের জন্য আহ্বান জানিয়ে
তাঁর স্বাধীনতার ঘোষণা প্রেরণ করেন।
দেশের সর্বস্তরের জনগণ বঙ্গবন্ধুর আহবানে
সাড়া দিল। শুরু হল
রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা যুদ্ধ। এ যুদ্ধের
ঢেউ লাগে কোটচাঁদপুর এলাকায়।
অত্র এলাকা হতে ছাত্র,
শিক্ষক, কৃষকসহ সকল পেশা-গোষ্ঠির লোক দেশ-মাতৃকার
শত্রুমুক্ত রাখার লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধে
ঝাঁপিয়ে পড়ে। মুক্তিযুদ্ধে এ
অঞ্চল গুরুত্বপূর্ণ এলাকা হিসেবে আবির্ভূত
হয়। এ অঞ্চলে যশোর
সেনানিবাস ও ভারত সীমান্তবর্তী
এলাকা হওয়ায় হানাদার বাহিনী
ও মুক্তিবাহিনীর নিকট লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত
হয়।
২৫
মার্চ, বৃহস্পতিবার। সন্ধ্যা ৫’৪৫ মিনিটের
মধ্যেই ইয়াহিয়া খানও শহরে অবস্থিত
প্রেসিডেন্ট হাউজ থেকে কেটে
পড়লেন। ইয়াহিয়া খানকে বহনকারী বিমান
গোপনে করাচীর উদ্দ্যেশে ঢাকা
ত্যাগ করে। সন্ধ্যা ৭’৪৫ মিনিট নাগাদ
জানাজানি হয়ে যায় যে,
ইয়াহিয়া খান ঢাকা ত্যাগ
করে করাচী চলে গেছে।
এদিকে দখলদার বাহিনীর ১০৭
পদাতিক ব্রিগেড ও একটি আর্টিলারী
রেজিমেন্ট যশোরে অবস্থান করছিল।
১ ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট
ছিল ১০৭ পদাতিক ব্রিগেডের
একমাত্র বাঙালী ইউনিট। উইনিটটি চৌগাছায়
শীতকালীণ যৌথ প্রশিক্ষণে নিয়োজিত
ছিল। ২৫শে মার্চ তারিখে
এই ব্যাটালিয়নকে সেনানিবাসে ফেরত আসতে নির্দেশদেওয়া
হয়। ২৯শে মার্চ দিনের
শেষে ১ ইষ্ট বেঙ্গল
রেজিমেন্ট সেনানিবাসে ফেরত আসে। যশোর
ক্যান্টনমেন্টের বাঙালী সৈন্যরা ২৯শে
মার্চ বিদ্রোহ ঘোষণা করে। লেফটেনেন্ট
হাফিজের নেতৃত্বে বিদ্রোহ সংগঠিত হয়। তখন
সেখানে পাঞ্জাবী সৈন্য ছিল ৩০০০
আর বাঙালী সৈন্য ১৩০০।এই
বাঙালী সৈন্যদের অর্ধেকের বেশীকে আটকে রাখা
হয় ক্যান্টনমেন্ট থেকে দূরে জগদীশ
অঞ্চলের একটি ক্যাম্পে। এই
ক্যাম্পটিকে বলা হত স্বীম
নং ১, চলতি কথায়
ই,পি,আর ক্যাম্প।
২৭শে মার্চ তাদেরকে ক্যান্টনমেন্টে
ডেকে পাঠিয়ে সমস্ত রাইফেল
এবং অস্ত্রাগারের চাবি কেড়ে নিয়ে
নজরবন্দী করা হয়। কিন্তু
তারা মাঝরাতে পাঞ্জাবী সৈন্যদের সঙ্গে সংগ্রাম করে
অস্ত্রসস্ত্র হস্তগত করে। তারা
জগদীশপুর ক্যাম্পের অস্ত্রও ছিনিয়ে নেয় এবং
কোটচাঁদপুরে ঘাটি স্থাপন করে।
হাজার হাজার জনতা ভিড়
করে তাদের দেখতে এল।
তারা স্বাধীন বাংলাদেশের লড়াইয়ে জনসাধারণের সমর্থন
চাইলো ও যার কাছে
যা অস্ত্র আছে স্থানীয়
থানায় জমা দিতে বললেন।
১লা এপ্রিল কুষ্টিয়া সম্পূর্ণরূপে
মুক্ত হয়। এ সময়ে
সামান্য সংখ্যক সৈন্য কুষ্টিয়ায়
অবস্থান করে এবং বাকী
সৈন্য ঝিনাইদহের দিকে অগ্রসর হয়ে
কিছু সংখ্যক সৈন্য মাগুরা,
কিছু সংখ্যক সৈন্য ঝিনাইদহের
দক্ষিণে বিষয়খালী ও কিছু সংখ্যক
সৈন্য কোটচাঁদপুর অবস্থান করে। উদ্দেশ্য যশোর
থেকে উত্তর দিকে শত্রুদের
অগ্রসর হবার সব পথ
অবরোধ করে রাখা।
১৯৭১
সালের ১৫ই এপ্রিল খান
সেনারা যশোর থেকে কালীগঞ্জ,
কোটচাঁদপুর, খালিশপুর হয়েমহেশপুরের দিকে চলে আসে।
পাক বাহিনী প্রথম দিকে
মুক্তিযোদ্ধাদের সকল প্রতিরোধ নিস্ক্রিয়
করে দেয়। কাজেই পাক
বাহিনী যশোর সেনানীবাস দখল
করার পর ১৬ই এপ্রিল
অপরাহ্নে ঝিনাইদহ দখলে আনে। তৎকালীণ
কুষ্টিয়া জেলার মেহেরপুর অঞ্চল
শত্রুমুক্ত হওয়ায় এবং নিরাপত্তার
বিষয়টি বিবেচনা করে ১৭ই এপ্রিল
মুজিবনগর সরকারের শপথ অনুষ্ঠান দেশী-বিদেশী সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে
অনুষ্ঠিত হয়।এর মাধ্যমে বাঙলাদেশ
সরকারের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়। ১৯৭১
সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে ব্যাপক ও জোরদার
করার উদ্দেশ্যে নির্বাচিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ রণাঙ্গণকে ১১টি
সেক্টরে বিভক্ত করেছিলেন। প্রতি
সেক্টরে একজন করে অধিনায়ক
নিযুক্তকরে যুদ্ধ পরিচালনার দায়িত্ব
অর্পণ করা হয়েছিল। কোটচাঁদপুর
৮নং সেক্টরের অন্তর্গত ছিল। এ সেক্টরের
দায়িত্ব ছিল মেজর আবু
ওসমান চৌধুরী (৭১-এর আগষ্ট
পর্যন্ত) এবং মেজর এম,এ, মঞ্জুর (সেপ্টেম্বর
থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত)। এ
সেক্টরের মধ্যে কোটচাঁদপুর বানপুর
সাব-সেক্টরের অধীন ছিল। এ
সাব-সেক্টর অন্যান্য এলাকার
ন্যায় মুক্তিযোদ্ধারা তৎপরতা চালায়। জুন,
জুলাই ও আগষ্ট মাসে
মুক্তিযোদ্ধারা দর্শনা, জীবননগর, হাসাদহ, খালিশপুর, কোটচাঁদপুর, কার্পাসডাঙ্গা, দত্তনগর, কালীগঞ্জ ইত্যাদি সড়ক ও রেলব্রীজের
উপর এত বেশী মাইন
পেতে রাখে যে, শেষ
পর্যন্ত পাক-বাহিনী ট্রেনের
ইঞ্জিনের সামনে বালির গাড়ি
লাগিয়ে চলাচল করত, যাতে
মাইনের আঘাতে ইঞ্জিন নষ্ট
না হয়... কিন্তু এত
বাধা-বিপত্তির ভিতরও মুক্তিযোদ্ধারা মাইন
লাগাত। ১৭ই জুন’৭১
কোটচাঁদপুর উপজেলার সাফদারপুর-এর নিকটবর্তী সুয়াদীর
মধ্যবর্তী স্থানে রেল লাইনের
মাইন বিষ্ফোরিত হয়। এতে একটি
ট্রেন ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়, সেপ্টেম্বর মাস
থেকেই ভারত যুদ্ধেরব্যাপক প্রস্তুতি
শুরু করে। ’ডিভিশনাল’ এবং ’কোর’ হেড
কোয়ার্টারগুলো অগ্রবর্তী স্থানসমূহে অবস্থান গ্রহণ করতে আরম্ভ
করে। সেপ্টেম্বর মাসের ৫ তারিখ
হতে নাজমুল হক গেরিলা
অবস্থান প্রস্তুত করে সেখান থেকে
এ অঞ্চলে আক্রমণ পরিচালনা
করত। দেশের চরম ক্রান্তিকালে
মফিজুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা
যুদ্ধের সৈনিক হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে
যোগ দেন। তিনি সাফদারপুর
রেল ষ্টেশন কোয়ার্টারের পার্শ্বে
অবস্থানরত পাক-হানাদার বাহিনীর
দোসর রাজাকার বাহিনীর গুলিতে আহত হন।
এ সময় তার সঙ্গীরা
পালিয়ে গেলে তিনি করুণ
আর্তনাদে বিনা চিকিৎসায় রাজাকার
বাহিনীর অত্যাচারে তৃষ্ণার্ত অবস্থায় চির অন্তিম শয়নে
পড়েন ৬ই সেপ্টেম্বর ১৯৭১
সালে।পাকিস্তান যুদ্ধ পরিচালনার জন্য
বাংলাদেশের প্রকৃতি বৈশিষ্ঠ্য বিবেচনায় দিশটিকে পৃথক চারটি সেক্টরে
বিভক্ত করা হয়। পাকিস্তান
এ সেক্টরে মেজর জেনারেল এম,
এইচ, আনসারীর নেতৃত্বে ৯ ইনফ্যান্ট্রি ডিভিশনকে
মোতায়েন করে। এই ডিভিশনের
হেড কোয়ার্টার ছিল যশোরে। পাকিস্তানের
৯ ইনফ্যান্ট্রি ডিভিশনের বিপরীতে ভারত লে: জেনারেল
টি,এন, রায়নার নেতৃত্বে
গঠিত ।। কোরকে
নিয়োজিত করে। এই কোরের
অধীন ছিল ভারতের দুটি
ডিভিশন: ৯ ইনফ্যান্ট ডিভিশনের
নেতৃত্বে ছিলেন মেজর জেনারেল
দলবীর সিং এবং ৪
মাউন্টেন ডিভিশনের নেতৃত্বে ছিলেন মেজর জেনারেল
মহিন্দর সিং বারার। মিত্র
বাহিনীর ৪ মাউন্টেন ডিভিশনের
৬২ মাউন্টেন ব্রিগেড জীবননগর-কালীগঞ্জ অক্ষে অগ্রভিযান পরিচালনার
দায়িত্বে ছিল। উক্ত ক্যাম্পের
মুক্তিযোদ্ধারা ৪ মাউন্টেন ডিভিশনের
৬২ মাউন্টেন ব্রিগেডের সাথে বিভিন্ন যুদ্ধে
অংশগ্রহণ করে। মিত্র বাহিনীর
৪ মাউন্টেনডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল
বারারেরপরিকল্পনা অনুযায়ী ৪১ মাউন্টেন ব্রিগেড
উথলী-সুয়াদী-কোটচাঁদপুর অক্ষে
এবং ৬২ মাউন্টেন ব্রিগেড
জীবননগর-কালীগঞ্জ অক্ষে অগ্রাভিযান পরিচালনার
দায়িত্ব নেয়। পাক-বাহিনীর
৯পদাতিক ডিভিশনের সদর দপ্তর ছিল
যশোর। ৯পদাতিক ডিভিশনের আওতাধীন ১০৭ পদাতিক ব্রিগেডের
দায়িত্বপূর্ণ এলাকা ছিল যশোর
অঞ্চল। এই ব্রিগেডের কমান্ডার
ছিলেন ব্রিগেডিয়ার মাহমুদ হায়াত। ব্রিগেডিয়ার
মাহমুদ হায়াতের নেতৃত্বে ১০৭ ব্রিগেড জীবননগর
থেকে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত দায়িত্ব ছিল। যার হেড
কোয়ার্টার ছিল মাগুরা। পাক-বাহিনীর ৫৭ ব্রিগেড সেনাদল
ব্রিগেড কমান্ডার মুঞ্জুরের নেতৃত্বে ৫০ পাঞ্জাব রেজিমেন্ট-এর কিছু অংশ
সুয়াদী, কোটচাঁদপুর এবং একটি কোম্পানী
ব্রিগেড রিজার্ভ হিসেবে চুয়াডাঙ্গা অবস্থান
করে। অপরদিকে ৪ মাউন্টেন ডিভিশন
মেজর জেনারেল বারারের নেতৃত্বে দুটি অক্ষ ধরে
অগ্রসর হতে থাকে। ৪১
ব্রিগেড ব্রিগেডিয়ার টনি বারারের নেতৃত্বে
উথলী-সুয়াদী-কোটচাঁদপুর অক্ষে
এবং ৬২ ব্রিগেড ব্রিগেডিয়ার
রাজেন্দ্রনাথের নেতৃত্বে জীবননগরের শত্রুকে বাইপাস করে খালিশপুর
কোটচাঁদপুরের দিকে অগ্রসর হয়।
পাক-বাহিনী ভেবেছিল মিত্রবাহিনী
চুয়াডাঙ্গা অথবা কালীগঞ্জ দিয়ে
অগ্রসর হবে। কিন্তু তারা
দুই অক্ষের কোনটাতেই না
গিয়ে স্থানীয় মুক্তিবাহিনীর সহায়তায় সুয়াদী চলে আসে।
এবং সাধুহাটিতে রোড ব্লক দিয়ে
চুয়াডাঙ্গাকে ঝিনাইদহ থেকে পৃথক করে
ফেলে। অগ্রসর হওয়ার সময়
মিত্রবাহিনী সুয়াদীর কাছে পাক-বাহিনী
দ্বারা অপ্রত্যাশিত বাধার সম্মুখীন হয়।
পাক-বাহিনী দীর্ঘ ২৪ঘন্টা
যুদ্ধের পর৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায়
পশ্চাৎপসরণ করে। এ যুদ্ধে
উভয়পক্ষের হতাহত হয়। ৫০
পাঞ্জাব রেজিমেন্ট এর সৈন্য ঝিনাইদহের
দিকে পশ্চাৎপসরণ করে। পাক সৈন্যরা
ঝিনাদহের দিকে যাওয়ার পথে
ভুল করে কুশনায় এসে
উপস্থিত হয়। এখানে পাক
সেনারা মুক্তিবাহিনীর প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়। পাক সেনাদের
৩জন মুক্তিবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে।
পরবর্তীতে তিনজন পাকসেনাকে ভারতীয়
বাহিনীর নিকট তুলে দেয়া
হয়। কুশনার যুদ্ধের পর
কিছু সৈন্য তালসার-ঘাঘা
হয়ে চিত্রা নদী পার
হয়ে ঝিনাইদহের দিকে চলে যায়।
চিত্রা নদীর অপর পাড়ে
(চুলকানী) পাকসেনারা মুক্তিযোদ্ধাদের বাধার সম্মুখীন হয়।
কোটচাঁদপুর শত্রুমুক্ত হ্ওয়ার প্রাক্কালে পাকবাহিনী
ও দেশীয় রাজাকার পর্যদুস্ত
হতে থাকে। ইতোমধ্যে ৪১
ব্রিগেডের ৫ গার্ড রেজিমেন্ট
এবং ৯ ডোগরা রেজিমেন্ট
৫ ডিসেম্বর বেলা ১২.০০
ঘটিকার মধ্যে কোটচাঁদপুর দখল
করে ফেলে এবং ৬২
মাউন্টেন ব্রিগেড দিনের শেষে কোটচাঁদপুরে
সমবেত হয়। ৬২ ব্রিগেড
প্রধান সড়ক ধরে কালীগঞ্জের
দিকে অগ্রসর হলে পাকসেনাদের
প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়। এ যুদ্ধে
আকস্কিক আক্রমণে ৬২ ব্রিগেড সৈন্যবাহিনী
হতাহত হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে
ভারতীয় বিমান বাহিনী হামলা
চালায়। পাকবাহিনী অতি অল্প সময়ের
মধ্যে পর্যদস্ত হয়ে পলায়ন করে।
মিত্রবাহিনী সহজে জয়লাভ করে।
কালীগঞ্জ শত্রুমুক্ত করে ঝিনাইদহ আক্রমণের
জন্য রওয়ানা হয়। শত্রুমুক্ত
হওয়ার মাধ্যমে কোটচাঁদপুর স্বাধীনতার স্বাদ গ্রহণ করে।
(লেখক- দেব নারায়ণ, সহকারী
শিক্ষক, তালসার সরকারী প্রাথমিক
বিদ্যালয়)
No comments:
Post a Comment